মজিদুল ইসলাম শাহ
হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী,
اللَّهُمَّ اجْعَلْ صِيَامِي فِيهِ صِيَامَ الصَّائِمِينَ وَ قِيَامِي فِيهِ قِيَامَ الْقَائِمِينَ وَ نَبِّهْنِي فِيهِ عَنْ نَوْمَةِ الْغَافِلِينَوَ هَبْ لِي جُرْمِي فِيهِ يَا إِلَهَ الْعَالَمِينَ وَ اعْفُ عَنِّي يَا عَافِياً عَنِ الْمُجْرِمِينَ۔
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার আজকের রোজাকে প্রকৃত রোজাদারদের রোজা হিসাবে গ্রহণ কর। আমার নামাযকে কবুল কর প্রকৃত নামাযীদের নামায হিসাবে। জাগিয়ে তোলো আমাকে গাফিলতির ঘুম থেকে। হে জগতসমূহের প্রতিপালক! এইদিনে আমার সব গুনাহগুলোকে মাফ করে দাও। আমার যাবতীয় অপরাধকে ক্ষমা করে দাও হে অপরাধীদের অপরাধ ক্ষমাকারী।
গুরুত্বপূর্ণ দিক
(১) সত্যিকারের রোজাদার ব্যক্তি হওয়ার জন্য অনুরোধ করা
(২) নামাজ আদায় করা এবং রাত জেগে ইবাদত করার অনুরোধ
(৩)আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা
দুআর বিশেষ বাক্য গুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ
১- اللَّهُمَّ اجْعَلْ صِيَامِي فِيهِ صِيَامَ الصَّائِمِينَ وَ قِيَامِي فِيهِ قِيَامَ الْقَائِمِينَ:
দুআর এই বাক্য গুলি থেকে স্পষ্ট হয় যে আমল ও ইবাদতের দুটি পক্ষ রয়েছে, একটি আপাতদৃষ্টি এবং দ্বিতীয় অভ্যন্তর দৃষ্টি, এই দুআর মাধ্যমে আমরা প্রকৃতপক্ষে অনুরোধ করছি যে বাহ্যিক রোজার মাধ্যমে আমরা আসল ও সত্য রোজা পর্যন্ত যেন পৌঁছাতে পারি, এবং আপাত নামাজের মাধ্যমে যেন বাস্তব নামাজ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি,কারণ মানুষ এমন এক অস্তিত্বকে ধারণ করে, যা দুটি উপাদান নিয়ে গঠিত, একটি হল তার প্রাণের অস্তিত্ব,অন্যটি তার আধ্যাত্মিক অস্তিত্ব, রোজা প্রকৃতপক্ষে দ্বিতীয় অংশের পথের বাধাগুলিকে সরিয়ে দেয় এবং এর শক্তি সরবরাহ করে। কারণ এমনকি যদি আত্মা রোজা রেখে, আল্লাহর গৌরবের জন্য কামনা, ক্রন্দন, হাসি, এবং বিভিন্ন ধরণের ইচ্ছা যদি পাওয়া যায়, অর্থাৎ যেন তারা যেমন ছিল তেমনিভাবে রোজা পালন করছে, সুতরাং এই প্রাণহীন রোজা তেমনই যেমন একটি ফুলের,তবে যদি সুগন্ধ না থাকে, দেহ আছে তবে আত্মা নেই, প্রদীপ আছে তবে আলো নেই, যদি সূক্ষ্ম আত্মা,শুদ্ধ চক্ষু, রোজার লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যম না হয়,তাহলে এ ধরনের রোজা আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে, রমজান মাসে রোজা রাখার ব্যবস্থা করা, কুরআন তেলাওয়াতের উদ্দেশ্য হল "আল্লাহর নুর যা ধুলায় লুকিয়ে আছে" তার প্রকাশ এবং শক্তিশালী হয়ে ওঠা এটাই হল আসল উদ্দেশ্য।
২- وَ نَبِّهْنِي فِيهِ عَنْ نَوْمَةِ الْغَافِلِينَ:
নামাজ এবং রোজার বাস্তবতায় পৌঁছানোর মানে হল মানুষের অজ্ঞতার স্বপ্ন বা ঘুম থেকে জেগে উঠা।
অবহেলার কারণসমূহ
১-দুনিয়াতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা না নেওয়া: আল্লহর নবী বলেছেন: সর্বাধিক অবহেলা ব্যক্তি হল সেই যে বিশ্বের পরিবর্তিত পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না।
২-নিজের জীবন বৃথা নষ্ট করা: হজরত আলী (আ:) বলেছেন: অবহেলার জন্য কি যথেষ্ট নয় যে ব্যক্তি এমন স্থানে নিজের জীবন অপচয় করে যা তার নাজাতের দিকে পরিচালিত করে না।
৩-অনুপস্থিতি: লোকমান তার ছেলেকে বলেছিলেন: অবহেলার তিনটি লক্ষণ রয়েছে: অন্যমনস্খ থাকা, কোনো জিনিসে মগ্ন হয়ে থাকা, খুব বেশি ভুলে যাওয়া।
অবহেলার অবসান
১-বোকামি: হযরত আলী (আ:) বলেছেন: অবহেলা ও বোকামি
২-অন্তরের নিষ্ঠুরতা : ইমাম বাকির (আ:): অবহেলা থেকে সাবধান থেকো এটি হৃদয়কে শক্ত করে।
৩-ধ্বংস: হজরত আলী (আ:): যার অবহেলার সময়কাল যত বেশি হবে সে তত তাড়াতাড়ি ধ্বংস হয়ে যাবে।
৪-হৃদয়ের মৃত্যু: হযরত আলী (আ:): যে অবহেলায় অভিভূত হয়,তার অন্তর মারা যায়।
৫-অন্তর্দৃষ্টি হ্রাস: হযরত আলী (আ:): অবহেলার বৃদ্ধি বিবেক বুদ্ধিকে অন্ধ করে দেয়।
৬-ক্ষয়ক্ষতি: ইমাম আলী (আ:): যে ব্যক্তি নিজের স্বর গণনা করেছে সে লাভ করবে এবং যে এ সম্পর্কে অসচেতন সে সম্পূর্ণ ক্ষতিতে থাকবে।
অবহেলার কারণ
১-ধন-সম্পদ ও সন্তান: পবিত্র কোরআন: হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ বা সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিচ্যুত করে না এবং যে কেউ এমন করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
২-স্বাচ্ছন্দ্য ও সুবিধা: পবিত্র কোরআন...: আসল বিষয়টি হল আপনি তাদের এবং তাদের প্রবীণদেরকে বিশ্বের সম্মান দিয়েছিলেন,সুতরাং তারা আপনার স্মরণে গাফিল হয়ে পড়েছে...।
৩-অধিক কামনা: أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ সম্পদ এবং শিশুদের প্রাচুর্য দ্বারা তোমরা অবহেলিত হয়েছ।
৩- وَ هَبْ لِي جُرْمِي فِيهِ يَا إِلَهَ الْعَالَمِينَ وَ اعْفُ عَنِّي يَا عَافِياً عَنِ الْمُجْرِمِينَ:
এবং এই শেষ বাক্যে আমরা আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনা করি আমাদের পাপ ক্ষমা করুন, আর এটাই আল্লাহর অভ্যাস তবে যদি আল্লাহর বান্দাদের বিষয়ে কোনও ভুল হয়,তখন সেই ব্যক্তির কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে যার পক্ষে ভুল হয়েছে।
ফলাফল
দুআর বার্তা: ১-রোজা গ্রহণের জন্য অনুরোধ; ২-নামাজ গ্রহণের জন্য অনুরোধ; ৩-অবহেলার স্বপ্ন থেকে জাগ্রত; ৪-গুনাহের ক্ষমা চাওয়া।
নির্বাচিত বার্তা: রমজান মাসের প্রথম দিনটিতে আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের অবহেলার স্বপ্ন থেকে জাগ্রত রাখার জন্য অনুরোধ করি যাতে আমরা আমাদের মুক্তির গ্যারান্টর হওয়ার জন্য নামাজ ও রোজা রাখতে পারি।
অবহেলার কারণ: ক) অজ্ঞতা; খ) স্বার্থপরতা; গ) আল্লাহর নেয়ামতে মাতাল; ঘ) শারীরিক স্বাস্থ্য;ঙ) অভিলাষ।
অবহেলার ফলাফল: ক) হৃদয়ের নিষ্ঠুরতা; খ) হৃদয়ের মৃত্যু; গ) কর্মের দুর্নীতি; ঘ) আল্লাহ থেকে দূরত্ব; ঙ) মানুষের ধ্বংস।
অবহেলার লক্ষণ: ক) সত্যকে না দেখা; খ) দুর্নীতিবাজ ও দুর্নীতিবাজদের সঙ্গ দেওয়া, ইবাদতের বৈঠক থেকে দূরত্ব; গ) সচেতন করার কারণ গুলি থেকে অসচেতন থাকা; ঘ) নিজের জীবনকে নিরর্থক ধ্বংস।